Tuesday, November 5, 2019

বিষাদ-মধুর বিকেল


লালিমার আবীর মেখে বিকেল নেমেছে চুপিসারে;
যেখানে মানুষ-মনে মৌনতা অভিমান করে-
যেখানে অতীত যুগ, ব্যস্ততা- চায় অবসর,
ফেলে আসা রাত-দিন, কথামালা, বিগত বাসর-
নিস্পৃহ সময়ের পায়ে এসে যেথা থমকালো...
বিষাদ-মধুর সময় কি কিছু বলে গেলো!


এখানে জীবন তার ডানাদুটো রেখে বিশ্রামে,
অনন্ত বিভাবরী বুকে নিয়ে- দুপলক থামে,
বলে যায় কানে কানে, “এসবই তোমার!
সূর্যের ম্লান আলো, নিঃশব্দতা, অচিন্ দুয়ার,
চেনা পৃথিবীর মাঝে অচেনার পরিচয় যেটুকুই পেলে;
এসবই তোমার-
যা ধরা দেয় বিষাদ-মধুর এই নীরব বিকেলে।


সামনে অসীম পারাবার,
সব পথে ঠাঁই নেয়- কুয়াশারা ধূসর, অপার
মোহের ছায়ার মতো ঘিরে ধরে, ভালোবাসা তার-
পায়েতে জলের ছোঁয়া বলে যায় নিভৃতে আবার,
আমরা তোমারই আছি.......
তোমার শ্রান্ত প্রাণে মুছে দিতে অতীত অশুচি;
অপেক্ষা নিয়ে গেছে- বহু দিন, বহু বহু কাল,
কত পাতা ঝরে গেছে,
কত তারা খসে গেছে,
কত ঝড় হারিয়েছে জানে মহাকাল
তবুও ভেবেছি শুধু- কবে কোন বিষাদ-প্রহরে,
তোমার পায়ের ছাপ এঁকে দেবে, ছুঁয়ে দেবে-
তোমার জন্যে গড়া একা-প্রান্তরে।


দিনের-রাতের সীমা যে সময়ে হয় এলোমেলো-
বিষাদ-মধুর এই বিকেলেই সে সময়টা এলো
দিগন্তে চেয়ে দেখি....চেয়ে থাকি....
কান পেতে শোনা যায় সীমানাকে পেরোনোর ডাক,
চেয়ে চেয়ে দেখি পৃথিবীর স্নেহ, মায়া- হতবাক,
দিবসের রুদ্রতা যে স্নেহে বিহ্বল হলো;
কোমল যে লালিমায় পরাজিত রজনীর কালো
যে আলোর ক্ষয় নেই, লয় নেই,
জানে না বিদায় দিতে-
জানে না কোথায় শুরু, কোথা অবসান-
শুধু চায়- অসীমের সাথে যাক চিরতরে মিলে যত
- অনন্ত প্রাণ

মূল্য



মূল্য সুধার হয় কি বেশি সুধাচোরের তৃষ্ণাতে!

আঁধার ছিলো বলেই আলো সুন্দরী হয় জোসনাতে;

আয়না যদি দেখাতে চায়, দেখাক্ নিজের বদসুরত-

তাই বলে কি হানবো না চোখ- প্রিয়ার মদির হোসনাতে!

নিয়ম



নিয়মের ঘরে জ্যামিতির ছক,


গণিতের সুরে গান..


কবিদের কথা অনাহূত সেথা-  নিদারুন বেমানান।

ভালো থেকো



কুয়াশার ভীড়ে হারিয়ে গিয়েছি-

একার তেপান্তরে,

অনিয়মটুকু নিয়ে গেছি, থাকো-

নিয়মের পথ ধরে।

প্রশ্ন - ৫



যা ছিলো তা চলে যায়- সময়ের পায় পায়,

কোন তৃষ্ণা বয়ে যায় প্রাণে কি!

হারানোর সীমানায়, যদি পিছু ফিরে চায়-

সে চাওয়ার থাকে কোন মানে কি?

নির্বাসন

ভণ্ড এখন ঝাণ্ডা ধরে গাইছে মুখে রবের শা’ন,

এলাহীকে ত্যাজ্য করে নামাজ রোজায় মুসলমান;


বেহুশিতে দোষ করেছি- নির্বাসনই চাইছি তাই-

নির্বাসিত মসলিসে চায় রবের দিদার এই পরাণ।।

Tuesday, March 12, 2019

কত আর?


















হাহাকার শুধু ভেসে গেছে,
কত বুক ফাঁটে চিৎকারে-
দয়াময়, তুমি কত রবে চুপ করে?
পূবে-পশ্চিমে মরছে মানুষ- অবিচারে নিপীড়নে,
বাতাসে মৃত্যু দু:সহ- শত শোষণে, নিষ্পেষণে,
মুক্তি খুঁজছে মানবতা, সে আজ বন্দী এ প্রান্তরে।
দয়াময়, তুমি কত রবে চুপ করে?

দিশাহীন হয়ে ছুটছে কেবল,
শত বছরের কান্নার রোল,
খুঁজে মরে পথ, হারায় অতল-
আঁধারের গহ্বরে।

শয়তান দেখো হেসে চলে তার বিজয় আস্ফালনে,
তৃষ্ণায় দগ্ধ পৃথিবী হাঁপায় শান্তির সন্ধ্যানে,
আর কত প্রাণ মৃত চাও প্রভু, তোমার বদ্ধ দ্বারে?
দয়াময়, তুমি কত রবে চুপ করে?

ঠুঁলি বাঁধা চোখ















সময় কাঁদছে- বুকে তার ক্ষত,
জীবন চলছে তবু প্রথামত,
রীতিমতো মরে- ঘরে ও ভাগারে, মরবার কথা যার।
আমি তুমি হাসি, সকাল সন্ধ্যে-
ভালোবাসাবাসি করি আনন্দে,
ধর্ষিতা হয়ে মৃত্যুটা লেখা ফাতেমার, সুফিয়ার।

ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়ি,
মূল্যবোধের বোধে সুড়সুড়ি,
তারপরে এই আবাল পৃথিবী সংবাদে রাখি গুঁজে।
দুপুরে টিফিনে কোর্মা পোলাও,
পেঁয়াজের সাথে শসাদুটো নাও,
উদ্বাস্তুর কান্না- না যেন ভেসে আসে ভুরিভোজে।

খাবো, দাবো আর বগল বাজাবো
চোখে, জিভে শুধু লালসা সাজাবো,
বানীতে গেঁজাবো- শ্রমঅধিকার, নারীদের অধিকার।
ধর্মের নামে দিয়ে যাবো ফাঁকি-
আতরে লেবাসে করে মাখামাখি,
এমন হুজুরে ভন্ডামি বলে সাধ্য কি স্রষ্টার!

নীতিকথা দিয়ে ছোটাবো ফোয়ারা,
আমদানি রবে বাঁশ আনকোরা,
চিন্তায় রবে- কোথায় কখন গুজবো সুযোগ-সই।
আমি সন্ন্যাসী, উদাসীন মন-
স্বার্থপরেরা কি বলে কখন,
সেই কথাগুলো ভাববার মতো অবসর থাকে কৈ?

দেশ ভেসে যাক- কিবা আসে যায়?
আমার ব্যালেন্স করেছি বিদায়-
টাকা-কড়ি বাড়ি, সব আছে জমা পেয়ারের সুইডেনে।
মানুষ ভাসছে গৃহহীন তারা,
বড় বিচ্ছিরি তাদের চেহারা,
বড় বেশি খায়- অযথা হাঁপায়, রোগে শোকে ক্রন্দনে।

ক্ষুধা নিয়ে তারা কত শোকাহত,
না খেয়ে কভু কেউ মরেনি তো!
তোদের খাবার মেরেই করেছি আলিশান পথঘাট।
আমার প্রাসাদে তোদেরই তো ঘাম-
এতেই সাজবে তোদের সুনাম।
আরো ভুখা থাক, সোনা দিয়ে গড়ি আমাদের তল্লাট।

সময় কাঁদছে- যুগের অসুখে,
তাতে আর কেন মরি মাথা ঠুকে!
দ্রৌপদীর শাড়ি খুলবেই এই যুগের দুর্যোধন।
পান্ডব সব ঘুমিয়েই থাকো-
এখনো জাগার ক্ষণ হয়নিকো,
নয় বড়জোর আমাদের মতো শাড়ি টানো প্রাণপণ।

ইশতেহার














নতুন ইশতেহার-
মানুষ জাগছে, সময় হয়েছে ঘুম থেকে উঠবার।

দু:স্বপ্নের রাতটা গভীর, আঁধার ভীষণ কালো,
ভোর হবে জানি, সূর্য উঠার সময় এবার হলো,
মানবতা আজ বুঝে নেবে তার নিজের যা অধিকার।
মানুষ জাগছে, সময় হয়েছে ঘুম থেকে উঠবার।

মশাল জ্বেলেছি আমরা ক’জন
আঁধারের সীমানাতে-
সুর্যকে পথ দেখাবো, তাকেও
বেঁধে নেবো নিশানাতে।

দুর্দশা মোড়া মৃত পৃথিবীতে এবার আসবে প্রাণ,
নিপীড়িত যত মানুষ শুনবে মানুষের জয়গান,
এই বিপ্লবে ভেসে সব শোষণের কারাগার।
মানুষ জাগছে, সময় হয়েছে ঘুম থেকে উঠবার।

বিদায় ছিলো !




“ফিরে এসো”- বললে তুমি যাবার কালে,
সত্যিই কি আসবো ফিরে চেয়েছিলে?
সন্ধ্যে বেলার অল্প আলোয়,
বিষাদ মনের মন্দে-ভালোয়,
মলিন মুখে দূরের পথে আড়াল হলে-
বিদায়কালের অশ্রুফোঁটা ফেলেছিলে?

শব্দগুলো আটকেছিলো বুকের মাঝে-
জমাট বাঁধা বরফ যেমন ফ্রিজের খাজে?
ঠোটের কোণে কাঁপছিলো কি,
“আর যেয়ো না”- বললে নাকি?
চিৎকার কি রুদ্ধ ছিলো গলার নীচে?
প্রশ্ন জাগে মনের কোণে করবো কি যে!

হয়তো তুমি তাকিয়েছিলে আর দু’টো ক্ষন,
ম্লান দু’চোখে বিদায় দিলে- যাবোই যখন।
হৃদয়টাতে আর কিছুদিন-
বেঁচে ছিলাম ঠিক অমলিন?
বুকের মাঝে ঢেউ জাগাতাম আগের মতন?
আমায় ভেবে চোখের তারা জ্বলতো তখন?

হয়তো তুমি চুপটি ছিলে নিজের মনে,
সুর ভেজেছো আমার কথায়, আমার গানে।
হয়তো তোমার সময়গুলো,
হঠাৎ করেই মলিন হলো,
স্বপ্নগুলো বিলীন হলো অন্যখানে।
শূন্যতা কি স্পর্শ পেলো পূর্ণপ্রাণে?

নাকি তুমি ভুলেই গেলে ভোলার নেশায়,
যা গিয়েছে- মনে রাখায় কি আসে যায়!
কি হবে আর হৃদয় কোণে,
আমরা কথায় ছন্দ বুনে,
কি মানে আর আছে নিছক অশ্রুফোঁটায়!
বিদায় যখন দিলে, তখন দিলেই বিদায়?

ভুলে গেলে আমার কথার কান্না-হাসি-
চোখের চাওয়ায় বলতে থাকা “ভালোবাসি”?
আমার পায়ের শব্দটাকে,
শুনতে চাওয়া পড়ার ফাঁকে,
আমার চাওয়ায় তাল মেলানো ইচ্ছেরাশি-
সব ভুলেছো, ভালোবাসার পাশাপাশি!

এখন আমি অনেক আগের, অনেক দূরের-
বাজতে থাকা বিভাবরী ছিন্ন সুরের।
এখন আবার আসবো ফিরে?
দ্বন্দ জাগে প্রশ্ন ঘিরে-
ঠাঁই এখনো আছে হৃদয়-অন্তপুরের?
শংকা আনে প্রশ্ন- মনের অন্ধকারের।

নাকি এখন বলবে “কেন আসলে ফিরে?
অতীত হয়ে ডাকছো কেন সেই তিমির?
যা ছিলো স্রেফ কথার কথা-
এখানে তার মূল্য কোথা?
অমূল্য যা হারায় পথে, তেপান্তরে-
‘না চাহিলে’-ও সে কি ফিরে আসতে পারে?

আমিই আন্দোলন















জীর্ণ পৃথিবী- তারস্বরে কাঁদে, বিক্ষোভে কাঁদে মন
সময়ের দ্বারে দাঁড়িয়ে বলছি- আমিই আন্দোলন।

ছুটে যাবো এই অনিয়ম ভেঙ্গে, টুটে দিতে কালো হাত
আমার বজ্রমুষ্ঠির থাবা- পথ খোঁজে দিনরাত
দূর করবে সে শোষণ, শাসন- বিভেদের বন্ধন।
সময়ের দ্বারে দাঁড়িয়ে বলছি- আমিই আন্দোলন।


ঘরে ঘরে আজ হাহাকার শুনি
মৃত্যু কেবল করে কানাকানি
তন্ত্রে-মন্ত্রে বাঁধা পড়ে আছে
অসহায় যত মানুষের ধ্বণি।

আজকে কেবল ঘোষনায় রবে বঞ্চিত যত প্রাণ
ক্ষুব্ধ হৃদয় প্রশ্ন ছুড়বে, মনে রেখে অপমান
নিশানা তুলেছি মাথা উচু করে, ফিরে পেতে সেই ক্ষণ।
সময়ের দ্বারে দাঁড়িয়ে বলছি- আমিই আন্দোলন।

সম্মুখে পথ
















সম্মুখে সেই পথ,
যে পথ বোঝেনা- সহজে হাঁটার সামান্য ফুসরৎ;
যে পথে চলে না, একটু থামা- নিজেকেই সম্ভোগ,
যে পথ মড়কে ঢাকেনি যুগের রোগ।
অনিয়ম এই প্রশস্ততায় ধীরে ধীরে পথচলা,
সময়ের রাহু গ্রাস করা এই আঁধারটা নির্জলা।
ঘরে ঘরে আজ নিপীড়নে-মৃত নতজানু ভেজাচোখ,
অশ্রু মোছাতে ছুটে চলো- তবে আজ প্রতিবাদ হোক।
গর্জন আনো ঢেকে সাহারার সাইমুম, সাইক্লোন
বৈশাখী হোক শ্রাবণের ভেজা মন।


ঝিমাবে এখনো ঘরে বসে তুমি, থাকবে কি চুপ করে?
আরো কোটি প্রাণ ঝিমায় অন্ধকারে।
দুই হাত তুলে মুক্তিকে খোঁজে, প্লাবিত চোখের পাতা,
ডাকছে- “এসো হে, আমার মুক্তিদাতা”।
তারা বসে আছে, তুমিই আসবে-
ভাবছে প্রাণের তাপে,
মুক্তি আনবে এ মৃত্যুর অভিশাপে।
তারা বসে আছে, দেখবে তোমার বজ্রবাহুর জোরে-
সূর্যকে টেনে আনছো রাতের পরে;
আগুন জ্বালাবে শীতল-কাতর মুমূর্ষু পৃথিবীতে,
আগুন জ্বালাবে রক্তের পরিধিতে।


তারপরও রবে বসে?
নির্জীবতার ভ্রুকুটিকে সয়ে নিয়তির অভিলাষে।
নিয়তিতে ভেসে গেছে এতদিন মানুষের সম্মান,
নিয়তিতে ভাসে শত-কোটি মৃত প্রাণ,
তারাও চেয়েছে সুদিন আসবে, শান্তির ছায়া পাবে,
মুক্তি মিলবে নিয়তির বিপ্লবে।
চেয়ে থেকে শুধু কেটেছে সময়, নিস্ফল কালগুণে-
ভাগ্যবিধাতা হেসেছেন আনমনে,
পরিহাসে তিনি বলেছেন “আরে, বোকার হদ্দ সব,
তুই-ই তো নিয়তি, তুই নিজে বিপ্লব।
স্রোতের জোয়ারে জাহাজ ভাসিয়ে সীমানার খোঁজ নিতে,
আমি তো তোকে পাঠাইনি পৃথিবীতে!


মগজে দিয়েছি চেতনার বীজ, হৃদয় দিয়েছি- মন,
প্রতিকূলে তুই হাল ধর প্রাণপণ।
শোষণ, বিভেদ, অন্যায় মাখা দুস্থ এ বারিধীতে,
দুর্জয় তোর প্রত্যয়- যেন টলে নাকো কোনোমতে।
ছোটে যেন তোর রক্তে তুফান, বাতাসের ঝঞ্জায়-
তোর ছাপ থাক প্রতিটি ঢেউয়ের গায়।
সবকিছু ফেলে ছুটে আয় এই প্রতিকূলতাকে ঠেলে,
কোনকিছু নেই আয়েশের অঞ্চলে।
সব ত্যাগ করে ছুটে আয় তবে- সব হারাবার দেশে,
আমাকেই পাবি সবকিছু অবশেষে।
পৃথিবীটা পাবে ডাঙ্গার খোঁজ, নিয়তির খোলা দ্বার,
বন্ধন সব করে ফেল চুরমার”।


সম্মুখের আহ্বান,
মেনে নেবে নাতো এক মুহূর্ত থামবার অপমান।
সে চায় রক্ত, সে চায় জীবন, সে চায় তিক্ত ঘাম,
ভোলাতে ক্ষুদ্র-স্বস্থির সংগ্রাম।
সে চায় দু’চোখ সদাজাগ্রত, সদাসতর্ক মন
সে চায় গতি, ছুটে চলা প্রতিক্ষণ।
প্রতি মুহূর্ত সংগ্রাম, আর স্বচ্ছ পুরুষকার-
দুর্বলতার মৃত্যুতে ভেট তার।
এখন তোমার নয়তো সময় চোখ নিচু করে চলা,
তন্দ্রার নেই অবসর এই বেলা;
জেগে উঠো, ছোটো, প্রতিজ্ঞাতে মুষ্ঠিটা দৃঢ় করে-
শান্তি আনতে, জীবন আনতে শীতল এই প্রান্তরে।