Saturday, December 30, 2023

তেমন করে...

 প্রেমের পদ্য লিখবো বলে বলেছিলাম,

দুই রঙে দুই পদ্ম দিয়ে ঋণ শোধালাম 🙂
.........................................................



যেমন করে রাতের আকাশ পেখম মেলে,
যেমন করে তারারা গায় সময় ভুলে,
যেমন করে ভোরের আলোয় সুর মিলে যায়,
হঠাৎ করে জাগতে থাকা পূবের হাওয়ায়।
তেমনি করেই তুমি জাগো মনে আমার,
পথ মেলে দাও -সুযোগ পেয়ে পথ হারাবার।



যেমন করে পলাশ ফোঁটে রাঙাতে বন,
যেমন করে ছুটতে থাকে মেঘের প্লাবন,
যেমন করে জোৎস্না ছোটে পাতার গায়ে-
আল্পনাতে পিকাসোকে মুষড়ে দিয়ে,
তুমিও ছুটো ভাবনাটাতে ঘূর্ণি তুলে,
তুমিও ছুটো আমায় ভালোবাসবে বলে।
.
বৃষ্টি যেমন মল্লারে তার তান গেয়ে যায়,
কোমল রেখাব ভৈরবীতে ভোরের ছায়ায়,
যেমন করে জে. সিং গলায় গজল টেনে,
নিয়ে যাবার পণ করে এক অন্যখানে।
তেমনি করে আমায় তুমি হঠাৎ করে,
যাও নিয়ে ঠিক পথ হারাবার পথটি ধরে।
.
নিয়ম ভেঙে, নিয়মগুলো দাও ভুলিয়ে-
ঘুঙুর বাজুক শেকল পড়া রিক্ত পায়ে,
যেমন বাজে রাপসোডি, তার নিজের মতো-
সুর গড়েছে; সুরের নিয়ম ভাঙ্গার ছুঁতো।
তেমনি তোমার আমার দ্বিধা ভাঙতে চেয়ে,
নিয়ম ভাঙার হাসি ফোটাও, মিষ্টি মেয়ে।
.
কবি যেমন ছন্দ খোঁজে রাতের ট্রেনে,
পদ্যটাতে পদ্ম ফোঁটায় শব্দ বুনে,
যেমন করে নীরবতার চাদর পেয়ে,
জোনাকি তার ছন্দ সাজায় রাতের গায়ে,
তেমনি করেই ছন্দ তোমার উঠুক জেগে,
আমার মনে তোমার চলার শব্দ লেগে।
.
নাহয় তাকাও শিশির ভেঁজা ঘাসের বনে,
রংধনুকে সাজায় সে কোন প্রেমের টানে।
কিংবা দেখো সাঁজের মেঘের আল্পনাটা,
লাল-সিদূরের আবছায়াতেই কাব্যছটা,
হাতটা ধরো এসব কিছু আঁকবে বলে-
আমার মনে; তোমার আসার সময় হলে।
.
কিংবা যেমন কিশোর মনে স্বপ্ন ভাসে,
অসম্ভবের গল্প বাঁচে যার আকাশে;
যেখানে সব হিসেব-নিকেশ ছুটিতে যায়,
অবুঝপণার জেদ মেশানো যাদুর ছোঁয়ায়।
তেমন করে রাত্রি দিনের কাব্য নিয়ে,
দাও তুমি সব রুক্ষ পথের দিক ভুলিয়ে।
.
আমার দু'চোখ চোখ-মেলেছে ক্লান্তি ভুলে,
কেবল তোমার চোখ দু'টিকে দেখবে বলে।
দেখবে যেমন সময় দেখে জীবন-ধারা,
অনন্ত সেই দেখাতে নেই কোনোই তাড়া।
তোমার দু'চোখ যাবে কবে আমায় ছুঁয়ে,
রাত্রি জাগে সেই প্রহরের তৃষ্ণা নিয়ে।
.
ডা. শাহীন মাহমুদ,
২৮/১২/২০২৩ ইং, রাত ২ঃ৩০ টা,
খুলনাগামী ট্রেনে

পথের অংক





চলছো তুমি তোমার মতো, আমিও আমার পথে-
জীবন চলে স্রোতের মতো নিজের ধারাপাতে।
সকাল আসে, রাত্রি নামে - ফের সকালের আলো,
একই নিয়ম, সময় কাটে মন্দ কিবা ভালো।
কেবল কিছু স্মৃতি খেলে বিস্মৃতিটার সাথে,
চলছো তুমি তোমার মতো, আমিও আমার পথে।




নামছে শীতের কুয়াশারা ফিরতে চাওয়ার ছলে,
মাটিকে সে চায় ছুঁতে স্রেফ বাসবে ভালো বলে।
রাতের আকাশ ফোঁটায় তারা- জ্বলে উঠার আশায়,
যেমন বাঁচে আশার আলো সকল সর্বনাশায়;
যেমন বাঁচে একরোখা প্রেম- কেবল নিজের মতে,
তবুও যাও তোমার মতো, আমি আমার পথে।

বেপরোয়া চাওয়ারা সব- ঢেউ তোলে মগজে,
হয়তো তারা এমনই হয়, এমন করেই বাজে,
এমন করেই হয়তো তারা সমান্তরাল রেখায়-
পথ দু'টোকে এক হতে- এক আজব গণিতকে চায়।
কিন্তু থাকেই অমিল- চাওয়া-পাওয়ার জ্যামিতিতে,
যেমন তুমি তোমার পথে, আমি আমার মতে।

হয়তো যেমন পিদীম জ্বলে, আঁধারকে না মেনে,
যেমন করে বাঁচতে চাওয়া- কারণটা না জেনে,
যেমন করে ভালোবাসার মৃত্যু হলেও, সেঁধে-
পুনর্জন্ম নেবেই নেবে নাছোড়বান্দা জেদে।
সেই জেদটাই কেবল থাকুক- বিস্মরণের স্রোতে,
তুমি চলো তোমার দিনে, আমি আমার রাতে।

ডা. শাহীন মাহমুদ,
২৮/১২/২০২৩ ইং, রাত ১টা।
খুলনাগামী ট্রেনে।

প্রেম-পদ্যের ত্রাস!









[বিবাহিত কবি প্রেমের পদ্য লিখতে চাইলে- শুরুতে এই মন্ত্র পাঠ জরুরি!!! 😅 😅 😅]
.
বসছি কলম ধরে,
কাব্য-জোসের তোড়ে,
মনের ভেতর প্রেমের পদ্য উথাল পাথাল করে-
কিন্তু করে ডর-
কী হবে তারপর!
দিল দিওয়ানা গিন্নীর চোখে যদি একবার পরে!
.
মনটা কাঁপে গীতে,
হাতটা কাঁপে শীতে,
শরীর কাঁপে আসন্ন সেই তুফান মাথায় নিতে!
পায় যদি খবর,
প্রশ্নটা তারপর-
‘বুইড়্যা কালের ভীমরতিটা আসছে কোন পিরীতে!’
.
ঘর হবে এক রণ,
শব্দ ঝনাৎ ঝন,
বাসন-কোসন যা আছে তা পড়বে জোরে জোরে;
খাদ্য-খানা সবে,
নুন-ঝাল কম হবে,
ঝাঁজটুকু তার পড়বে বাঁধা বাক্যবাণের ডোরে।
.
কাক, মশা, মাছি সবে
প্রাণভয়ে তড়পাবে,
সানন্দে তারা এ বসত ছেড়ে দু’দিনের ছুটি নেবে,
কিন্তু অভাগা আমি,
গৃহের পালিত স্বামী,
চিল-চিৎকার হযম করার কসরতে প্রাণ যাবে।
.
মোবাইলটা আমার!
তারও নেই নিস্তার-
গোয়েন্দা চোখ ঢুকবে চ্যাটিং বক্সটাতে বার বার;
করবেই ছানাছানি-
আমার ডায়েরিটা তা তো জানি,
কোথা থেকে এত প্রেম আসে- তা জানতে সে জেরবার।
.
এ হেন অবস্থাতে,
আবেদন জোড় হাতে,
বিপদ-তারিণী থাকলে, আসেন কমেন্ট-বক্সটা ঘেঁটে;
প্রেরণা-ট্রেরণা দিলে,
দুর্যোগটাকে ভুলে,
কলমের কালি বসাইতে পারি প্রেমের পদ্যটাতে।

Friday, December 15, 2023

প্রহেলিকা!

আমি আছি; চারপাশে বেঁচে আছে আমার চেতনা,

অনাদির ভ্রুণ থেকে বিকশিত চাঁদের মতোন;

অবিরত গুণে যাই তার আনাগোনা,

অবিরত গুণে যাই,  

দেখে যাই-



যেভাবে সে মিশে থাকে কুয়াশার ধূসরে মিলিয়ে,

শুনে যাই, অটবীর পাতাগুলো ছুঁয়ে-

যখন যে সঙ্গীতে ভরে তোলে আমার আকাশ;

যখন সে কল্লোলে জেগে উঠে জানায় আভাস-

সে রয়েছে, আমি আছি; সত্য সে আমার চেতনা-

তার আল্পনা- রঙিন করেছে এই ভোরের কিরণ,

আমার জীবন কিবা সাঁঝের লালিমা,

তারই আলোতেই আজ এত অনুপমা!

 

তারপরই দ্বিধা জাগে মনে-

চেতনার আলোতে যা এসেছে জীবনে,

সেও কি সত্য ঠিক আমার মতন!

সেও কি জীবন!

নাকি স্রেফ মিছে প্রহেলিকা!

তারও কি চেতনা আছে, আছে বোধ,

প্রাণের আলাপন!

নাকি সে কুয়াশা শুধু!

ধোঁয়াশা সে, আমার চেতনা যারে করেছে বপন!

আমি তাকে দেখি যুগ যুগ পার করে,

সেও কি আমাকে দেখে তার মতো করে!

নাকি তারা শুধু মায়া, শুধু এক মিছে খেলাঘর?

আমি আছি, আমার চেতনা আছে- বেঁচে আছে তারা,

তারপর হয়ে যাবে পর...! 

Wednesday, December 13, 2023

আমার শহর

 

বেড়েছি আমি, বেড়েছে আমার শহর আমার সাথে,

উপকণ্ঠের সীমানা বেড়েছে, পুরোনো সে গলিপথে;

বেড়েছে স্মৃতি, বেড়েছে যা কিছু বাড়ার ছিলো সবই-

তবু, কৈশোর আজো দাপিয়ে বেড়ায় পুরোনো শহরটাতে।



এই শহরেই দেখেছি কীভাবে শীতের কুয়াশা নামে,

দেখেছি কীভাবে সন্ধ্যের আকাশে ধ্রুবতারা এসে থামে;

দেখেছি কীভাবে রাত ভীড় করে, চারপাশে কিবা মনে-

কীভাবে মানুষ মরে যায়, আর কারা বাঁচে ডানে-বামে।


এ শহর চেনা যেভাবে নিজেকে চিনেছি নিজের মনে,

যেভাবে আমি ছড়িয়ে রয়েছি স্টেডিয়ামে বা উদ্যানে;

ভিক্টোরিয়ার মোড়ে কিংবা নিরালার কোণ ঘেষে-

শহীদ মিনারে, শান্তিকুঞ্জে মিশে আছি সবখানে!


মিশে আছি আমি, মিশে আছে স্মৃতি, আর বড় হয়ে যাওয়া,

প্রথম প্রেমের কান্না, অথবা প্রথম যা কিছু পাওয়া;

সুমনের গান, গিটারের টান, চুরি করে সিগারেটে-

ভার হয়ে আছে আমার স্মৃতি, আর শহরের হাওয়া!


আমার পৌঢ় মুখে হবে জানি বিদায়ের ভাঁজ আঁকা,

তখনও থাকবে বুড়ো শহরের পথে – এই স্মৃতি রাখা,

শুরুতেও জানি সাথে ছিলে তুমি, শেষেও থাকবে পাশে-

মনে রবে শুধু একদিন এই একসাথে বেঁচে থাকা।