Wednesday, May 31, 2017

ঘুমিয়ে কেন এ দুঃসময়ে?


ঘুমিয়ে কেন এ দুঃসময়ে? জাগ্রত মহাগতি।
হে নারী, জাগো, জাগাও এ জাতি, কাটাও এ দুর্গতি।

কুপমণ্ডুক সন্তান মোরা অন্ধ অহংকারে
তোমার স্বরূপ দেখিনি মোদের মিথ্যে সংস্কারে।
শক্তি হয়েছ গৃহবন্দী,
ভোগ্যপণ্য, দৃষ্টিনন্দী,
যে হাত বিলায় আলো আর প্রেম যুগে যুগে দ্বারে দ্বারে,
তার আলো কেন ডুবে আছে আজও, ক্ষীণ দৃষ্টির ভারে ?

এখনো কি তবে হয় নি সময় চোখ মেলে তাকাবার
জন্মদাত্রী বন্ধ্যা হোলে তো মৃত্যু এ জাতিটার।
তোমার শিক্ষা, সভ্যতা, নীতি, তোমার শিষ্টাচার
তোমার সাহস না পেলে মোদের শক্তি কোথায় আর?

চেয়ে দেখো এই জীর্ণ জাতির ভাগ্য অস্তাচলে
শক্তিবিহীন নির্জীব প্রায় তোমায় চেনেনি বোলে
উঠে এসো, নাও নিজের আসন
উষর মরুতে জাগাও জীবন
নতুন সূর্য নিয়ে এসো এই রাত্রির আঁচলে।
দুঃসময়ের রাত কেটে যাবে তুমি জাগ্রত হোলে।

তিতীক্ষা

সেদিন আবার কি আসবে না?
যেদিন পোড়া বারুদের গন্ধে-
ধূসর পৃথিবীটা ভাসবে না।

কান্নার ধ্বণি হবে সুপ্রাচীন ধরনীর ইতিহাস
খুন হোয়ে যাবে অকারণ সব যুদ্ধের অভিলাষ
লাশে ভরা এই সভ্যতা আর রিক্ত বসতি জুড়ে
প্রাণ ছুয়েঁ যাবে, জীবন জাগবে মৃতের আস্তাকুঁড়ে
নীলিমা কি তার ভালোবাসা নিয়ে দিগন্তে মিশবে না?

সুরে সুরে হবে লেনদেন সব মানুষের চাওয়া পাওয়া
বাতাসে ভাসবে সেই গান যা হয়নি এখনো গাওয়া
যে গান কেবলই ভালোবাসা আর জীবনের কথা বলে
হাসায় কেবল- হাহাকার আর অশ্রুকে মুছে ফেলে
আকাশ কি তার উদারতা নিয়ে একসাথে হাসবে না?

বিভেদের খুটিঁ ভেঙ্গে যাবে, যেমন এখন হৃদয় ভাঙ্গে
মানুষ সাজাবে মানুষের হাত নির্ভরতার রঙ্গে
সীমান্তগুলো হোয়ে যাবে সব মিলেমিশে একাকার
অধিকার পাবে সবার হৃদয় দিগন্তে হারাবার
শান্তির সাজে জীর্ন জীবন এবার কি সাজবে না?

সমস্যা কী

খাওনি তাতে কি হয়েছে?
কেন এত আহাজারি?
তুমি ভালো খেলে কি করে চোলবে-
নেতাদের ঝকমারি।

খাওনি তাতেই কান্না?
আরে, খেয়ে খেয়ে কেউ বাঁচে?
মারতে মারতে বাঁচিয়ে রাখতে,
নেতা নেত্রীরা আছে।

কেন মিনমিনে আর্তি,
চুপ করে থাকো সব!
বড় বেমানান কান্না তোমার।
দেশজুড়ে উৎসব।

প্রাণপ্রিয় গণতন্ত্র, প্রাণাধিক প্রিয় দেশ,
চুলোয় যাকগে তোমার বিশ্রী রক্তমাখানো বেশ।
দেশপ্রেম রাখো হৃদয়ে, পেটে বাঁধো সরকার,
ভোট গ্রহণের বাক্স তোমার মৌলিক অধিকার।
সোনামুখ কোরে কাটাও জীবন, নেতাদের দেয়া মন্ত্রে
মৃত্যু এমন আদরেই হবে ষড়যন্ত্রে।

মরবে তাতে কি হয়েছে?
সবাই তো মরে যাবে;
ভোট কমিশন প্রস্তুত আছে-
হিসাবটা সামলাবে।

তুমি সামলাবে কান্না,
আর নেতারা তোমার লাশ,
চোখ খুলে রাখো সামনেই আছে
মৃত্যুর অবকাশ।

বিস্মৃতির জঞ্জাল

No automatic alt text available.
একই গ্রহে আমরা দু’জন থাকি,
একই রকম জীবনের সংঘাতে;
তোমার আমার পদচারণার প্রহর
ঘুরছে, ঘুরেছে একই কক্ষপথে।
একই রকম সময়কে পাড়ি করা-
জীবন, জীবিকা, জ্যামিতির কোলাহলে
একই রকম ভুলে থাকা সবকিছু,
ছুড়ে ফেলা সব বিস্মৃতির অঞ্চলে।

একই পৃথিবীই তোমার আমার ভূমি,
একই বাতাসেই তুমি নি:শ্বাস ফেলো,
পথ খোঁজে তারা আমার বুকের ভেতর-
আমার রক্তে মিশে যায় এলোমেলো।
তারপরও ভাবি, তুমি থাকো কতদূরে,
তোমার আমার সীমানা কিভাবে সাঁজে ?
এখানে কঠিন আঘাত যদি বা আসে,
প্রতিধ্বণিটা কি তোমার ওখানে বাঁজে?

একই দেশের আমরা দুইটি প্রাণী,
একই ভাষায় হয়তো কবিতা পড়ি,
একই রকম সুরেই হয়তো গাই,
একই রকম স্বপ্ন-সৌধ গড়ি।
স্বপ্ন তবুও নিজের রাস্তা দেখে,
বাস্তবতায় সেও যে স্বয়ম্বর-
তোমার স্বপ্ন উর্ধ্বাকাশেই ছোটে,
আমার স্বপ্ন ধূলোতেই গড়ে ঘর।

একই শহর তোমার আমার প্রাণ,
রাস্তাগুলোতে অতীত ফেলেছে ছাপ,
সেখানে তোমার নিছকই আনাগোনা-
আমার কাছে তা বয়ে রাখা অভিশাপ
এভাবে হয়তো একই ভাবে তুমি ভাবো-
যেভাবে ভাবিছি আমিও চিরটা কাল;
একই স্মৃতিতে তুমি আছো, আমি আছি
শিরোনামে থাকে- “বিস্মৃতির জঞ্জাল”।

আত্মভোলা

হাসছো তুমি কার কথা শুনে মেয়ে?
হাসতেই থাকো চারপাশ কোরে আলো,
আমার মতোন কান্না চাপার চেয়ে
প্রাণ খুলে হাসো- সেটাই বরং ভালো।
ব্যথার বোঝা কেন বুকে নেবে তুমি-
বিস্মরণের দুয়ার যেখানে খোলা !
ছাই কোরে ফেলো স্মৃতির জন্মভূমি,
ভাববো, “মানসি, বড়ই আত্মভোলা।”
ভুলে যাও তুমি হাসতে আমার কথায়-
কখনো কখনো বিস্ময়ে হতবাক,
বিস্ময় আর হাসি নিয়ে তুমি থাকো
স্মৃতির শাসন আমার প্রাণেই থাক।

ভাবছো তুমি কার কথা আজ মেয়ে?
ভাবতেই থাকো, নতুন কথার ঢেউ-
আছড়ে পড়ুক তোমার শরীর বেয়ে,
হাসি মেখে থাক তোমার ভাবনাতেও।
পরিমিতিটাকে বাসতেই হবে ভালো,
তা দিয়ে কিনবে শত ভালোবাসাবাসি-
ছককাটা পথে জ্যামিতির তালে চলো,
মেপে মেপে ভাবো, পরিমাপ কোরে হাসি।
আমি তো আছিই- বেতাল বেসুরো পথে,
হিসেবের খাতা বন্ধ চিরটা কাল,
অংক মিলুক তোমার কোমল হাতে-
আমাতেই থাক্ গরমিল, জঞ্জাল।

গাইছো তুমি কার গান আজ মেয়ে ?
সুর, তাল, লয়, ছন্দটা আজ কার ?
উচ্ছাসে ভাসো কার বাহুলীন হোয়ে-
তোমার কন্ঠে আজ কার অধিকার !
বন্ধনহীন বোকাদের ভালোবাসা,
ছুড়েঁ ফেলে দিয়ে যেখানে পোড়লে বাধাঁ,
সেখানে কেবল পরিমিত সুরে ভাসা-
ব্যাকরণ মেনে হৃদয়ের গান সাধা।

কখনো কখনো আমিও কিন্তু হাসি
অকারণে বাজে বিধিহীন কিছু গান,
তোমায় ভাবতে এখনো তো ভালোবাসি,
ভাবনায় আসে প্রশ্নের অভিযান-
"আদৌ কি গান গাইতে পারছো মেয়ে ?
হাসিটা তোমার স্বচ্ছ প্রাণের হাসি ?
ভাবনা তোমার বলে কি মুক্তি নিয়ে-
জ্যামিতিকে নয় জীবনকে ভালোবাসি।"

কুয়াশার মত মেয়ে

Image may contain: sky, ocean, outdoor, nature and water

নামছে কুয়াশা আনমনে চুপিসারে
শীতের চুমুটি এভাবেই আসে ফিরে-
ফিরে ফিরে আসে ফেলে আসা ভোলা সুর,
হৃদয় ছুটছে স্মৃতির অচিনপুর।

কোথায় হারালো সন্ধ্যের ভিজে ঘ্রাণ,
সন্ধ্যেতারার সঙ্গী শান্ত প্রাণ?
গোধূলিরা আজ হারিয়েছে বহুদূরে,
এবার হয়তো আসবে আবার ফিরে।

ফিরে ফিরে আসে কুয়াশার সাথে নেমে
যা কিছু গিয়েছে অতীতের ছেড়া খামে।
কুয়াশার স্মৃতি মহাকাল করে জয়
হারিয়েও যারা হয়ে গেছে অক্ষয়।

তুমিও তো ছিলে কুয়াশার মত মেয়ে
মোহ ছিল ঐ শরীরের ছায়া বেয়ে,
রহস্য যত পৃথিবীর শেষ হতে
তোমার পায়েই দিয়েছিল হাত পেতে।

দু'চোখের মাঝে ধোঁয়া ফেলে যেত কত,
ধাঁধায় পড়েছি একেলা বেদনা হত।
শীতের মত কুয়াশার মত মেয়ে,
কুয়াশার মাঝে তোমাকেও দেখি চেয়ে।