Sunday, July 22, 2018

হুজুর-মূর্খ কথোপকথন - ২















মূর্খ:
হুজুর, বান্দা হাজির, রাখুন কদম পাকের নিচে
মনের যত আরজ গুজার, সবই আপনার কাছে্।
কিছুদিন হলো, বেয়াদব মনে
ক্যাত-কোৎ করে ক্ষণে কু-ক্ষণে
এককথা ভেবে শুয়ে পড়ে যেই, আর কথা ভেবে নাচে
হুজুরের জ্ঞান-পরশ পেলে তবেই হৃদয় বাঁচে।

হুজুর:
আরে মিয়া কথা তারাতারি কও, সময়ের বড় তাড়া-
ওয়াজের এক শিডিউল দিছি, বড়-মালঞ্চ পাড়া।
সেখানে ছুটছি তড়িঘড়ি করে,
কাঁচা টাকা কিছু আসবে এ ঘরে,
তার সাথে হবে ভোটের আবাদ, যদি তারা দেয় সাড়া;
সম্মুখ থেকে সরলেই সব, ঘাড় করে রাখে ত্যাঁড়া।

মূর্খগুলোরে এতই বোঝাই, ডেকে ডেকে হাঁক পেড়ে
লেবাসের উপর ভোটের ছাপটা মেরে দিস খুব করে।
কিন্তু ব্যাটারা বদের গাট্টি,
শেষে দেখা যায় গুছিয়ে চাট্টি,
কাফেরের ছাপে ভোট মেরে আসে, সকল শ্রমের পরে;
ভোটের ব্যালট গনণার কালে কপালে কুংফু মারে।

মূর্খ:
হুজুর, এটা তো ভীষণ আজব, ইসলামের এই দেশে,
কোটি কোটি জন নামাজ পড়ছে রাসুলকে ভালোবেসে।
তারপরও তারা ভোটের সময়,
ছুড়ে ফেলে দিয়ে সব ডরভয়,
ইসলাম ছেড়ে এধারে ওধারে ভোট কেন মেরে আসে?
সেইক্ষণে কেন হুজুগের দল, ছুটছে অন্য পাশে!

হুযুর:
আরে বোঝো নাই, ইসলাম হলে- সব হবে ইসলামি,
দুর্নীতিহীন বিধানের কাছে, ভেঙ্গে যাবে আঁতলামি।
সমাজ, রাষ্ট্র, পাড়া, মহল্লা,
সবকিছুরেই চালাবে আল্লাহ,
ফাঁকিবাজি আর বেঈমানি সব শুণ্যেতে যাবে নামি;
এই কারণেই অপরাধী সব করতেছে ইতরামি।

কিন্তু দেখরে কতটা মূর্খ, এই আবালের দল,
এত বড় এক ইবাদত তারা করে নাই সম্বল।
রাসূলের কালে কত না আঘাতে,
কতখানি ত্যাগে, প্রাণ প্রণিপাতে,
ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতরিয়ে কত, ইসলামে আনে বল;
চোখের অশ্রু বাঁধ মানছেনা, প্রাণ হয় বিহ্বল।

আজকে কত সহজেই দেবো ইসলাম তোর ঘরে,
শুধুই একটা ভোটই তো দিবি- আল্লাহর নাম করে,
লাগবে না সওয়া সে নির্যাতন,
সেই প্রচেষ্টা, সেই ক্রন্দন,
সেই বোকামির কি প্রয়োজন? ব্যালট জিহাদ করে-
বেহেশতটার টিকিট কাটবি, লেবাসেই ভোট মেরে।

মূর্খ:
হুজুর, তাইলে প্রশ্ন একটা- করে দেন তার গতি,
শত বছরের উপরে চলছে ধর্মের রাজনীতি,
অনেক দেশেই পেয়েছেন জয়,
সমর্থনে হয়ে নির্ভয়-
ক্ষমতায় যেতে পারে নাই, ফের পেয়েছে সে দুর্গতি;
সঠিক পথটা হলে আল্লাহর কেন এ ভিন্নমতি?

হুযুর:
তাদের কথা বলেই কি হবে, ওদের ভ্রান্ত পথ
বাইরে লেবাস যতই থাকুক, ভেতরে অন্য মত।
ইসলামি নামে সুবাস তুলে,
ভোটগুলো তারা খেলো প্রাণখুলে,
কিন্তু আল্লাহ ঠিকই তো জানেন, তাদের কি কু-নিয়্যত;
সেই কারণেই বন্ধ তাদের দলের ভবিষ্যত।

আমরা ভালো, আমরা মহান, আমরা সঠিক দল,
ইসলামে মোরা পূর্ণ করবো কাফেরের অঞ্চল।
আমাদের শুধু ভোট দিয়ে যা,
তারপর খালি দেখবি মজা,
এক ফুৎকারের কাফেররা সব হয়ে যাবে হীনবল;
ইসলাম, খালি ইসলাম; আহা, এবার “আমিন” বল।

মূর্খ:
“আমিন”, হুজুর, কিন্তু একটা প্রশ্ন মনের মাঝে,
ক্যাঁও ক্যাঁও কোঁকাচ্ছে, আর কাঁটার মতোই বাজে,
ইসলাম এক জীবনবিধান,
স্বতন্ত্র্য এক পথসন্ধ্যান,
ভোটে উঠলে তো ফের ডুববেন গণতন্ত্রের সাজে;
মিল কি করে রাখবেন হেথা, কথায় এবং কাজে?

গণতন্ত্রতো রাষ্ট্রবিধান, ভোট পাড়ি দিয়ে গেলে,
ব্যবস্থাটাকে ছুঁড়ে ফেলবার অধিকার কভু মেলে?
যাই-ই করবেন তার বিধানে-
চলতেই হবে ইসলাম জ্ঞানে,
আপনি তখন বিধাতা তো নন, নিজেই যে তার কোলে;
তাইতো ক্ষমতা পাননি- পেলেও থাকেনি তা সু-দখলে।

হুযুর:
“কাফের! কাফের! কুফরি প্রশ্ন!” এত তোর কু-সাহস?!!!
আমার মতোন আলেমের সাথে করছিস এ বাহাস?
এই চিন্তা কি তোর করা লাগে?
ভাবিনা কি এটা মোরা তোর আগে?
আলেম ওলামা আমরা সকলে কাটছি মাঠের ঘাস?
গলা ফাঁক করে, পেট্রোলে দিলে বুঝবি, হে বদমাস।

তওবা কর, হে মূর্খ- মাথায় এই চিন্তাটা আসায়,
দ্বীন-দুনিয়ার কি যে ক্ষতি হবে, বুঝবিনা তুই ভাষায়।
আখেরাত তোর হবে ছাড়খার,
আমাদের হাতে হবি জেরবার,
তার চেয়ে শুধু ভোট দিয়ে যা, ইসলামি পরিভাষায়;
আর বসে থাক ইসলাম ঘরে আসবে সেটার আশায়।

মূর্খ:
হুজুর, হয়েছে গোস্তাখি- মাফ চাইছি তা সবিনয়ে,
তারপরও এক প্রশ্ন থাকছে, মোবারক দুই পায়ে,
নিবন্ধনের শপথনামায়
আনুগত্যের নিয়েছেন দায়
রাষ্ট্রবিধান মেনে চলবার, গণতন্ত্রের ছায়ে;
নিবন্ধণের শপথ খানারে ভাঙ্গবেন কি উপায়ে?

ভেতরের কথা, বাইরের কথা দুই রকমের হলে-
মনে পড়ছেনা ঠিকমতো, তাকে আলেমরা কি যেন বলে?
যাই হোক, যদি শপথ মানেন,
তাইলে যে কথা ওয়াজে টানেন,
সেই কথাটাই থাকবে কিভাবে, ক্ষমতা দখলে গেলে?
দুই রকমের চেহারা হবেই, এই ঘোর কলিকালে।

হুযুর:
ওরে বদমাশ, মূর্খ, দালাল এ কাফের সরকারের-
জানা নেই তোর কতটা ধার এই ফতোয়ার তলোয়ারের?
স্পর্ধা দেখাস মুনাফেক বলে!
পরে বলিস না রগ কাটা গেলে-
তোকে সাবধান করিনিকো আমি, নতুন ক্ষুরের ধারের;

আর অভিশাপে পুরো করে রাখা ইহকালে-পরকালের।

No comments:

Post a Comment