Tuesday, July 24, 2018

তৃষ্ণা

দুষ্মন্ত: খেতে গিয়ে পড়ে যাওয়া দুই ফোটা জল ছুঁয়ে দিল বুক আর বুকের আঁচল। যদি দিতে চাও মোরে কোনো দক্ষিণা, ওই দুই ফোটা জল করি প্রার্থনা।।


শকুন্তলা: পড়ে যাওয়া জল ভাসে চির অনাদরে, কখনো সাজে না সে যে প্রীতি উপহারে। নিতে যদি চাও- নাও অশ্রুর ভার- দান নিয়ে দাতা হও; করো সুবিচার।।




দুষ্মন্ত: নেব আঁখিজল নেব আঁচলের ফুল, ভালবাসা বুঝে নেব তার সমতুল। তথাপি সে বুকছোঁয়া দু ফোটা জীবন আবে হায়াতের মতো চায় দেহমন।।


শকুন্তলা: আগ্রাসী প্রেম জানি সবকিছু চায়, আলো, আলেয়ার ভেদ করে সে বিদায়; তবু আলো চিরদিন প্রভা করে দান, আলেয়া- সে কভু নয় আলোর সমান। এ জগতে যাহা ঝরে, হারায় অকূলে ম্লান হয়ে যায় ফুল শাড়ির আঁচলে, যা থাকে, তা থাকে- শুধু হৃদয়ের ধন এ দু’ফোঁটা জল কভু থাকে আজীবন?


দুষ্মন্ত এ ধরাতে নয় কিছু অবিনশ্বর, আলেয়ার আলো, চাঁদ-তারা-প্রভাকর। মধু আর মধুপের মিলনের কথা লিখেছেন মনবনে বিশ্ববিধাতা।। ফুলের সুবাস, শোভা, মধু ও পরাগ, সব মিলে সাজে ফাগুনের গুলবাগ, নয় শুধু অনুভূতি বিরহের খেলা, প্রেমযমুনার তীর খোঁজে রাসলীলা।।




শকুন্তলা:

তাই যদি হয়, তবে এ দু'ফোটা জল-
ধারণ করেছে এই হৃদয় কমল,
অশ্রুর মতো জানে সেও কথকতা,
প্রেম যমুনায় লেখা আছে সে বারতা।

আত্মসমর্পণে প্রেমের সাধনা,
সেখানে কি বাদ থাকে জল দুই কণা?
আমাকে গ্রহণ করো, প্রাণেশ আমার,
এ দু'ফোটা জল তাতে থাক উপহার।



উল্লেখ্য: দুষ্মন্ত ছিলেন পুরু বংশীয় রাজা, পঞ্চপাণ্ডবের পূর্বপুরুষ। রাজা দুষ্মন্ত মৃগয়াতে এসে কন্বমুনির আশ্রমে কণ্ব মুনির পালিতা কন্যা শকুন্তলার দেখা পান ও তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে বিবাহ করতে চান। শকুন্তলা বিবাহ করতে রাজি হন এই শর্তে যে,তাঁর গর্ভজাত পুত্র দুষ্মন্তের অবর্তমানে সিংহাসনে বসবেন। দুষ্মন্ত তাতে স্বীকৃত হয়ে শকুন্তলাকে নির্জনে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করেন। এই কবিতাটিতে আমরা শকুন্তলার প্রতি দুষ্মন্তের আকৃষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে শকুন্তলার আত্মসমর্পণে সম্মত হওয়া পর্যন্ত উভয়ের কিছু কাল্পনিক সংলাপ তুলে ধরেছি।

দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার সংলাপগুলো লিখেছেন যথাক্রমে Riyadul HassanShaheen Mahmud

পরশ-অপরশ

পরশ: 

বললে তুমি বাসবে ভালো শুধুই মনে মনে-
শুনে আমি মুচকি হাসি, অতি সংগোপনে
মৌমাছিটার গান শুনে কি ফুল ফুটেছে বনে?
মধুর সাথে পরাগরেণুর চুক্তি কে না জানে?

বললে তুমি বাসবে ভালো সত্যি দূরে থেকে,
যেমন করে দূরের বাঁশি কাঁদায় হৃদয়টাকে
শুনে আমি প্রশ্ন করি মনের সঙ্গিনীকে,
বাঁশি কেন বাঁশুরিয়ার অধর ছুঁয়ে থাকে?

বললে তুমি আমি নাকি বড্ড বেশি বেশি,
বাড়াবাড়ি করলে পাবো দুঃখ রাশি রাশি
শুনে আমি অট্টহেসে বলি, "হে প্রেয়সী
দুঃখকে ভয় লাভ কী করে দুঃখ ভালোবাসি"

পড়ে থাকা লোহায় যেমন মরচে ধরে যায়-
স্রোত হারালে বালুর চরে নদী হোঁচট খায়
তেমনি ভালোবাসা বাঁচে, যতন চর্চায়
প্রেমের ধরা হৃদয় এবং হাতের পরশ চায়


















অপরশ: .
বেশ বলেছো, ভাবছি আমি কোথায় ভালোবাসা?
মিলন হলেই যায় কি মিটে মনের তিয়াসা?
আকাশ, বাতাস, মাটি ফুল শুনলে তাদের ভাষা,
দেখবে সেথায় সবটা দেবার নিষ্কাম প্রত্যাশা

ধরার নিয়ম মেনেই পরাগ মৌমাছিতে লাগে,
ভালোবাসা কিন্তু সেথাও কবির মনেও জাগে
বাঁশি যেমন বাশুরিয়ার পরশ অনুরাগে,
সুরের মাদকতা ছড়ায় বসন্তেরই রাগে

মিলন হতে পারে যখন শরীর যেমন চায়,
এইটুকুতে ভালোবাসার সীমান্ত আটকায়?
মনের মাঝে অসীম ভুবন, চাওয়ায়-পাওয়ায়,
তার সীমানা বেঁধে কে দেয় অসীম ধৃষ্টতায়!

ভালোবাসার চর্চা, যতন- ভালোবাসায় বাঁচে
মনের গহীন বন্দরে তার রাজত্ব বিরাজে
হাতের পরশ থাক বা না থাক লহরী তার বাজে,
নিকষিত প্রেমের ছোঁয়ায় শুদ্ধ প্রেমের সাজে


পরশ এবং অপরশ অংশ যথাক্রমে লিখেছে, সুধাচোর এবং ডা. শাহীন