Monday, April 9, 2018

অতীত-বিলাস














বিকেলের ধোঁয়াশায় মাটির উঠোন,
সোনালী রোদের বুকে সোনার বিছানা,
খড় ছাওয়া ঘর থেকে গরাদের কোণ;
কলমীর বেড়া দেয়া ছোট্ট সীমানা।

ধূলো পায়ে ধানগুলো নাড়ানোর ফাঁকে
পথের বাঁকে তার চকিত চাহনি।
নাকের সোনার নথ চমকাতে থাকে
চৌকাঠে পড়ে থাকে হাঁড়ের চিরুনি।

চারপাশে ধানক্ষেত, মরা খর-নাড়া
শুকনো ধূসর মাটি, স্নেহের শিশির
বহুদূরে পথিকের ক্ষীন চলাফেরা
বিকেলের ছায়াপটে সিঁদূরে আবীর।

ঘরে ফেরা পাখিদের মৃদু কলতান
তার সাথে ডাহুকের সন্ধ্যে আরতি
বায়ু পড়ে আসে চারপাশে নিস্প্রাণ
কদমের শাখা চেয়ে থাকে যথারীতি।

চেয়ে থাকে বয়ে চলা নদীটির বাঁক
ঘরের দুয়ার থেকে এতটুকু দূর
মেটো পানি চলে যায় চির নির্বাক
তার দিকে তাকিয়েই অসীম সুদূর।

ঘিরে আছে ছায়া আর রোদ্দুর তাকে
মুখে চির-অতীতের মিহিন নেকাব
কোথা থেকে স্মৃতিটুকু ইশারায় ডাকে?
সাঁঝ-ভৈরবীতে হয়ে কোমল রেখাব।

কোমল মাটির ঘ্রাণ, ছায়া-গোধূলীতে
ভীড় করে আসে নিয়ে আলোক-আঁধার
এ স্মৃতি ভেসে আসে কোন তরণীতে?
কোন সময়ের তীরে এর পারাপার?

বিস্মৃতি ফেলছে শুধু ফিসফিসে শ্বাস
বিভাবরী স্মৃতি নিয়ে লুকোচুরি তার
এই সন্ধ্যের বুকে অতীত-বিলাস,
হারানো সে সন্ধ্যের খোঁজে আঁখি-ভার।

Tuesday, April 3, 2018

তৃষ্ণা

দুষ্মন্ত:
খেতে গিয়ে পড়ে যাওয়া দুই ফোটা জল
ছুঁয়ে দিল বুক আর বুকের আঁচল।
যদি দিতে চাও মোরে কোনো দক্ষিণা,
ওই দুই ফোটা জল করি প্রার্থনা।। 
শকুন্তলা:
পড়ে যাওয়া জল ভাসে চির অনাদরে,
কখনো সাজে না সে যে প্রীতি উপহারে।
নিতে যদি চাও- নাও অশ্রুর ভার-
দান নিয়ে দাতা হও; করো সুবিচার।।
দুষ্মন্ত:
নেব আঁখিজল নেব আঁচলের ফুল,
ভালবাসা বুঝে নেব তার সমতুল।
তথাপি সে বুকছোঁয়া দু ফোটা জীবন
আবে হায়াতের মতো চায় দেহমন।।
শকুন্তলা:
আগ্রাসী প্রেম জানি সবকিছু চায়,
আলো, আলেয়ার ভেদ করে সে বিদায়;
তবু আলো চিরদিন প্রভা করে দান,
আলেয়া- সে কভু নয় আলোর সমান।

 জগতে যাহা ঝরে, হারায় অকূলে
ম্লান হয়ে যায় ফুল শাড়ির আঁচলে,
যা থাকে, তা থাকে- শুধু হৃদয়ের ধন
 দুফোঁটা জল কভু থাকে আজীবন?
দুষ্মন্ত
 ধরাতে নয় কিছু অবিনশ্বর,
আলেয়ার আলো, চাঁদ-তারা-প্রভাকর।
মধু আর মধুপের মিলনের কথা
লিখেছেন মনবনে বিশ্ববিধাতা।।

ফুলের সুবাস, শোভা, মধু  পরাগ,
সব মিলে সাজে ফাগুনের গুলবাগ,
নয় শুধু অনুভূতি বিরহের খেলা,
প্রেমযমুনার তীর খোঁজে রাসলীলা।।


শকুন্তলা:
তাই যদি হয়তবে  দুফোটা জল-
ধারণ করেছে এই হৃদয় কমল,
অশ্রুর মতো জানে সেও কথকতা,
 প্রেম যমুনায় লেখা আছে সে বারতা।

আত্মসমর্পণে প্রেমের সাধনা,
সেখানে কি বাদ থাকে জল দুই কণা?
আমাকে্ গ্রহণ করোপ্রাণেশ আমার-
 দুফোঁটা জল তাতে থাক উপহার
                         

[দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার সংলাপগুলো লিখেছেন যথাক্রমে সুধাচোর ও শাহীন]

              

যাত্রা

রাতের আঁধার চিড়ে দিলো এই এক ফোঁটা রোদ্দুর,
চলো হেঁটে চলি তার পথ ধরে বহুদূর…..বহুদূর।
ঘাসে ও শিশিরে, সবুজে-তুষারে মিতালীতে পথ চলা,
তার তালে তাল রেখে হোক আমাদের কথা বলা।
কথায় বলবো, কিভাবে মানুষ মানুষের হাত ধরে-
বলবো কিভাবে শুকনো দু’চোখে মমতারা ভীড় করে;
বলবো কিভাবে ক্রন্দনগুলো ইতিহাস হয়ে যায়,
কতটা ব্যাকুল হলে এ পৃথিবী ভালোবাসা পেতে চায়।
আমরা বলবো সুদিনের কথা, হোক পথ বন্ধুর
এক ফোঁটা রোদ সাথে নিয়ে চলো বহুদূর বহুদূর।

যেমন আকাশে রংধনু ভাসে, কুয়াশারা উড়ে যায়
আশা ও স্বপ্ন ভাসুক এভাবে সুদূর পথচলায়,
পথেই ছড়াবো ভোরের আবীর, পথেই ছড়াবো গান
নিস্প্রাণ চোখে আমরা করবো পুনর্জন্ম দান।
আরেকটি ভোর পৃথিবীর হোক বিবর্ণ প্রান্তরে,
যেখানে আঁধার বেসুরো মৃত্যু অবিরাম খেলা করে,
খেলাঘরটাই ভেঙ্গে ফেলি নিয়ে দ্বিধাহীন কিছু সুর-
তার পথ ধরে হেঁটে চলি চলো, যায় চোখ যতদূর।।

প্রশ্ন-৪

শিশিরের বুকে ঘাস নেয় ভোরে ঠাঁই
বাতাসের বুকে ভাসছে পথের ধুলো
বলা হয়নি কখনো “তোমাকে চাই”
আমার স্বপ্ন তবু তোমাকেই পেলো।








বিস্মৃতির মাঝে হওনি মোটেও ম্লান
এখনো হৃদয়ে তোমাকেই আমি দেখি
বোকামির আজো হয়নি তো অবসান
ভাবছি এভাবে তুমিও ভাবছো নাকি?

শাশ্বত















সকালের রোদ একই ভাবে আসে প্রাচীন কালের মত,
শীতের কুয়াশা একইভাবে ভাসে ধূসর বেদনাহত,
একই ভাবে পাখি গেয়ে যায় গান – নিজের কথামালায়;
একইভাবে হাসে মুক্ত পৃথিবী, কাদেঁ কারো কান্নায়।
জীবনের সব সুর কেটে যাবে, যেভাবে সময় কাটে-
মানুষ থাকবে, হেঁটে যাবে তারা পরিচিত তল্লাটে;
কারোদিন যাবে অগোছালো, কারো স্বপ্ন দু’চোখে বুনে,
কারো ব্যস্ততা স্বপ্নবিহীন জীবনের সন্ধ্যানে।
আজকের ফুল ঝরে যাবে তারা যেভাবে ঝরেছে কাল,
আজ যা মধুর ভীষণ কামনা, কাল হবে জঞ্জাল,
পরিবর্তনও আসবে যেভাবে সব কিছু বদলায়-
তুমি হয়ে যাবে অপরিচিতা আমার পৃথিবীটায়।
আমিও হারাবো মহাকালের এই অতিচেনা পথ ধরে,
বিস্মৃতিই হবে অমোঘ নিয়তি নিয়মের পারাবারে,
একটি কথা রেখে যাবে তবু খাপছাড়া এলোমেলো-
ভুলে যাওয়া এই পৃথিবীতে আমি তোমাকে বেসেছি ভালো।