অজানার কাল থেকে ভেসে আসে
কোন এক সুদূরের ডাক;
সময় অবাক!
ধূসর স্মৃতিতে তার ফেলে আসা মৃত বিভাবরী,
চোখ তার রাতের চকোরি-
চেয়ে আছে যদি তার মুক্তির চাঁদ উদ্ভাসে।
মনে তার, সুপ্রাচীন নগরের ক্ষয়ে যাওয়া দ্বার,
মনে তার-
অগণিত মানুষের কোলাহলে মুখরিত স্মৃতির আধার।
স্নেহের হাতের স্পর্শ- মুখে, বুকে, হৃদয়ের ‘পরে
তার মনে পড়ে-
কোন এক প্রেমের, মোহের মাঝে
বয়ে যাওয়া একফোটা ক্ষণ,
মনে পড়ে- ভালোবাসা ভালোবেসে কেটে যাওয়া একটি জীবন;
প্রবল তৃষ্ণায় রুদ্র একখানি সময়ের পট,
রাগ,প্রেম, অভিমান, রণ নিয়ে যে সময় সাজে।
আরো একবার,
হৃদয়ের চোখে খোলে আরো এক স্মৃতির দুয়ার।
কানে আসে, নীলনদে ভেসে আসা স্রোতের প্রলাপ,
রাতের বাতাসে মেশা মিছে অপলাপ-
পিরামিডে জেগে থাকা, প্রেয়সীর করুণ আহ্বান;
পাথরের খাজেঁ খাজেঁ মিশে থাকা প্রেমের আরতি,
চির-বিরহের মাঝে বেঁচে থাকা, চির-মিলনে স্তুতি,
কাল থেকে কালে ছোটা চির-অভিমান।
যে সুর অর্ফিয়াস তুলে নিয়েছিলো তার তারে,
মথুরায় প্রতিধ্বণি শোনা যায় বাশুরীর সুরে,
যে সুর, যে মহিমা- যুগ থেকে যুগে বাঁচে;
সুদূরের পটভূমি, শত যবনিকা যার কথা বলে রাতে-
আঁধারের ফিসফাসে,
কুয়াশারা প্রতিটা প্রভাতে-
যার কথা বলে যায়-
দৃশ্যান্তর – তবু কুশীলব বেঁচে থাকে যাহার মায়ায়।
তার কথা, তার সুর, তার ছবি- হারিয়েও অম্লান আছে,
মহাকালের বুকে গোপনে গোপনে কালান্তরে;
আরো মনে পড়ে,
যখন সে মুসাফির সীমাহীন পথের ধাঁধায়,
যখন দু’পায়ে-
কেবলই অসীম গতি, মুক্তির উদ্দেশে ছোটা;
ফেলে আসা সময়ের প্রতি ফোঁটা রক্তে মিশায়ে-
যখন সে ছুটে চলে আদমের কান্নার মতো,
যখন সে ছুটে চলে অপ্রাপ্তি নিয়ে অবিরত
দেশ থেকে দেশে,
ভল্গার পথে আর কাবেরীর কূলে।
মাহেনজোদারোর ধূলো লেগে যার লুপ্ত কপোলে,
খুজেঁছে কোথায় পাবে একবার বিশ্রাম তার
কোথায় কুটির পাতা- তার আত্মার উদ্দেশ্যে।
আজো সেই অভিযান, সেই সুর, সেই চলাচল,
ধূসর ধূলোয় আজো ছুটে চলা ;
আজো অঞ্চল-
চষে যাওয়া সন্ধ্যানে কোথায় সে স্থির স্বান্তনা।
আজো মুক্তির বন্দনা,
আজো চলে অন্তরে ক্রন্দন- বহমান ধারা,
আজো বিরহ, আজো তৃষ্ণার পসরা
আজো সেই অবিরাম সুরে জেগে থাকা;
কোথায় সে ঠাঁই,
যা সময়ের শুরু থেকে শুধু ঢেকে রাখা?
